।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
বেনারসের রস
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
একটা বিশাল হলঘর । তার একেবারে শেষ প্রান্তে একটা অদ্ভুত দর্শন পিলারের উপর একটা বহুমূল্য হীরে রাখা আছে।
সেই হীরে চুরি করতে হবে। কিন্তু সেই হীরে অবধি যেতে হবে হেঁটে হেঁটে। অত সহজ নয় ব্যাপারটা।
প্রত্যেক পদক্ষেপেই মৃত্যু হতে পারে , কেননা মেঝেতে ল্যান্ড মাইন পোঁতা আছে।
মেঝেটা সাদা আর কালো টালি দিয়ে ঢাকা। কোন টালির তলায় মরণফাঁদ লুকিয়ে আছে কেউ জানেনা।
কিছু টালি আছে নিরাপদ। কিন্তু চেনার উপায় নেই। সেই নিরাপদ টালির ওপর পা রেখে রেখে, সম্পুর্ণ আন্দাজে মানে কপাল ঠুকে এগিয়ে যেতে হবে সেই হীরের দিকে। রুদ্ধশ্বাস দৃশ্য। একটু ভুলচুক হলেই মাইন ফেটে অবধারিত মৃত্যু ।
দৃশ্যটা অমিতাভ বচ্চন অভিনীত একটি সিনেমার।
কিন্তু কথা হলো বেমক্কা এই দৃশ্যের অবতারণা কেন ? সবুর করুন সব জেনে যাবেন ।
নারায়নী , বেনারসে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি এসেছেন। সদ্যোজাত নাতনির মুখ দেখবেন বলে।
দেখলেন। কী সুন্দর , কী সুন্দর । মা দুর্গার ছবি দেওয়া লকেট শুদ্ধ সোনার চেন নাতনির গলায় পরিয়ে দিয়ে চুমু খেয়ে আদর করলেন।
বিনয় বাবুর চোখে জল। মুখে পবিত্র হাসি। বললেন,, দ্যাখো দ্যাখো কী সুন্দর হাসছে দ্যাখো।
ওরে, এই ফোকলা মুখের ভূবণ ভোলানো হাসিটুকু দেখবো ব’লে ছুটে এসেছি। দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে বললেন ,,
বড়ো হও। অনেক অনেক বড়ো হও, মা আমার।
পরের দিন সকালে , বেনারসী বেয়ান, নারায়ণী কে বললেন চলুন , বিশ্বনাথ দর্শন করে আসি , যাবেন?
নারায়নীর খুব যে ইচ্ছে ছিল তেমন নয়। কেননা এর আগের বারে যখন এসেছিলেন তখন দর্শন করে গিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা যথেষ্ট মধুর নয়।
সরু সরু গলি। গলির দুপাশে সার সার দোকান। নানান পশরা সাজানো। অসম্ভব ভীড়। সেই ভীড়ের মাঝে আচমকা হাজির হয়ে যায় ইয়া দশাসই বেপরোয়া পালোয়ান মার্কা ষাঁড় । সিং এর বহর দেখেই পিলে চমকে ওঠে।
হাঁটার স্টাইল জমিদারের মতো। রাস্তা জুড়ে বসে থাকে মহারাজের মতো। খায় ভগবানের মতো , পরম আদরে ভক্তের প্রেম মিশ্রিত পবিত্র প্রসাদ।
সেই প্রসাদ , উদরে রাত কাটিয়ে প্রভাতে কিংবা সন্ধ্যায় দেহ নিঃসৃত হয়ে বিপুল আকারে সশব্দে পথিমধ্যে যেখানে সেখানে পতিত হয়ে পড়ে থাকে।
পথিক গন অবিচলিত ভাবে নিরুদ্বেগে সেগুলো পাশ কাটিয়ে নির্বিকার চলে যান। নিতান্তই স্বাভাবিক নিত্যকার ঘটনা।
কিন্তু নারায়নী কোলকাতার বেহালার মেয়ে। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তার এবিষয়ে বিস্তর মানসিক ফারাক।
তাই তাকে পথ চলতে হয় , ঐ অমিতাভ বচ্চনের সিনেমার মতো। সাবধানে , চোখ খোলা রেখে। একটু অন্যমনস্ক হলেই কেলেংকারী । পায়ে গোবরে মাখামাখি হয়ে বিদিকিচ্ছিরি কান্ড হয়ে যাবে।
শুধু তো পা নয় শাড়ি বাঁচানোর ব্যাপারও আছে।
শাড়ির নিচের দিকে ঐ জিনিস লেপ্টে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর। তাই শাড়ি গুটিয়ে প্রায় হাঁটুর কাছ বরাবর।
রাজকাপুর অভিনীত মেরা নাম জোকার ছবিতে একটা গান ছিল। সুপার হিট।
এ ভাই জারা দেখকে চলো উপর ভী নেহি , নিচে ভী ডাঁয়ে ভী নেহি , বাঁয়ে ভী,,,,
মনে মনে গুনগুন করতে করতে হাঁটলে নিরাপত্তা বোধ সজাগ থাকবে।
তাই দেখে বেনারসী বেয়ান হেসে বাঁচেন না। বলেন ,,
এ কি কান্ড। এইভাবে চললে তো রাত কাবার হয়ে যাবে।
নারায়নী নাক সিঁটকে বলেন ,,,
না রে বাবা ,, আমার বড্ড ঘেন্না করে।
শুধু কি এই ? এরপর আছে বাইক যন্ত্রণা। সংকীর্ন গলির মধ্যে ভয়ংকর বিরক্তির কারণ এই বাইক।
দুপাশে দোকান। সামনে দশাসই ষাঁড়। পিছনে বাইকের কর্কশ আওয়াজ।
বিশ্বনাথের গলি তো নয় , যেন মহাভারতের চক্রব্যূহ । একবার ঢুকলে বেরিয়ে আসার জন্যে সাধ্যসাধনা করতে হবে ।
প্রতি মুহূর্তে নারায়নীর মনে হচ্ছিল ,,
হে বিশ্বনাথ , তুমি মাথায় থাকো। আমাকে রেহাই দাও। এই গলির যন্ত্রণা থেকে আমাকে মুক্ত ক`রে দাও। আমি বাড়ি যাবো।
মেয়ে ইন্দ্রাণী খুব খুশি। আনন্দে ডগমগ হয়ে বললো , মা তোমরা এসেছো খুব ভালো হয়েছে। হ্যাঁ গো মা , তোমরা এখন এখানে কিছুদিন থাকবে তো ?
নারায়নী নাতনি কে, এ ডি অয়েল মাখাতে মাখাতে বললেন ,,,
হ্যাঁ , কিছুদিন তো থাকতেই হবে। এতদূর থেকে এলুম। দু চার দিন না থাকলে হয়। তুইও একটু সামলে ওঠ।
মেয়ে আস্বস্ত হয়ে বললো সেই ভালো। আমি তো এখন কিছুই করতে পারছি না। সব কাজ শ্বাশুড়ি একা হাতে করে।
নারায়নী অবাক হয়ে বলেন ,,,
সে কী ! তোদের কাজের লোক , কী যেন নাম? কুন্তী,,, সে কোথায় গেল ?
শ্বাশুড়ি রান্নাঘরে ছিলেন। বেয়াই বেয়ান সেই কোলকাতা থেকে এসেছেন। আপ্যায়ন না করলে হয় ? কুটুম্বিতা জরুরি। তাই রান্নাঘরে ভীষণ ব্যাস্ত। পঞ্চব্যাঞ্জণের নিখুঁত আয়োজন।
শেষের কথাটা কানে গিয়েছিল। বললেন ,,
কুন্তীর কথা আরকি বলবো। সে ভেগেছে।
বলেই মুচকি হাসলেন ।
মেয়েরা মুচকি হাসিতে সর্বদাই রহস্যের গন্ধ পান। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না।
নারায়নী , দুজনের চোখ মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন। কিছুই বুঝতে না পেরে বলেই ফেললেন ,,,
কী ব্যাপার ?
মেয়ে বললো,,
ওসব শুনে তুমি কী করবে ? ওরা ওই রকমই, বাদ দাওতো।
বাদ দাও বললেই কী বাদ দেওয়া যায় । কেমন যেন অন্যরকম স্মেল পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের মনে কৌতূহল বাসা বাঁধলে তার নিরসন না হওয়া অবধি ভাত হজম হবেনা। বিশেষ করে তাতে যদি স্ক্যান্ডালের গন্ধ থাকে।
নারায়নী বললেন,, মানে প্রায় আবদার করে বললেন ,,,,
শুনি না , কী ব্যাপার ?
ইনু ( ইন্দ্রাণীর আদুরে নাম ) র শ্বাশুড়ি বেশ রসিক মানুষ । রসের কথা রসিয়ে বলতে পারেন । বললেন ,,,,
আরে , ভেগেছে মানে নতুন নাগর জুটিয়ে তার সঙ্গে ভেগেছে।
নারায়নী একটু কপাল কুঁচকে বললেন,,,
যতদুর শুনেছিলাম ,,, মানে,, ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল না ?
> ঠিকই শুনেছিলেন। তবে কী জানেন , ওর বরটারও একটা মেয়ের সঙ্গে নাকি লটঘট আছে ।
ইনু মাঝখানে বলে উঠলো ,,,
মেয়ে বলছো কেন , সেটাও তো একটা বউ।
নারায়নীর ঠোঁটের কোণেও এবার দুষ্টু দুষ্টু মুচকি হাসি । বললেন,,,
কী সব কান্ড রে বাবা । একটা সংসার করা বউ পালালো , আর একটা সংসার করা বরের হাত ধরে । লাও ঠ্যালা,,
তিন জনেই হৈ হৈ করে হেসে উঠলো।
বেনারসী বেয়ান চোখ মোটকে চাপা গলায় বললেন ,,,
জানেন তো আমাদের এই বেনারসে একটা প্রবাদ চালু আছে ,,,
বেনারসে , সিঁড়ি , ষাঁড় আর রাঁঢ় থেকে সাবধান।
আবারও বেদম হাসির ফোয়ারা ছুটলো ।
বেনারসে এসে গঙ্গা আরতি দেখবেন না ?
সে কী কথা ? চলুন চলুন,, খুব ভালো লাগবে। চলুন ।
বেনারসী বেয়াই জোর তাগাদা দিলেন। কিন্তু বিনয় বাবুর তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। বললেন ,,,
না,, মানে,, শরীরটা ঠিক নেই। ঐ আসবার সময়ে ট্রেনের মধ্যে পড়ে গিয়ে ,,
> ও, হ্যাঁ , তাওতো বটে । ব্যাথা ট্যাথা কোথাও হয়েছে নাকি ?
> হ্যাঁ , এই কোমরের কাছটা,,
> এইরে যন্ত্রণা আছে নাকি ?
> না,, তেমন কিছু নয়। তবে সামান্য একটু জ্বর এসেছে মনে হচ্ছে ।
> না না,, তবে তো অবহেলা করা চলে না, দাঁড়ান,, ডাক্তার কে একটা ফোন করি।
বিনয় বাবু , অপ্রস্তুত হয়ে বললেন ,,,
না না ,, আপনি ব্যাস্ত হবেন না। ও কিছু না। প্যারাসিটামল খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
> ও,, আচ্ছা ,, ঘরে কি প্যারাসিটামল আছে ? ওগো ,, একবার এদিকে আসবে ? তাড়াতাড়ি ।
পড়ে গেলেন কীভাবে ? কী হয়ে ছিল কী?
বিনয় বাবু পরলেন ফ্যাঁশাদে। সব কথা কী সবসময় সব লোককে বলা যায় ? নাকি সেটা শোভনীয় ?
কীভাবে বলবেন জোরসে ছোটো বাইরে পেয়েছিল , বারবার টয়লেটে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে , হালকা হওয়া যায়নি। প্যান্টের চেন আটকে গিয়েছিল। তাকে সাহায্য করতে মিডল সিট থেকে তার স্ত্রী নিচে নামতে গিয়ে বেসামাল হয়ে গড়িয়ে পড়ে যান। তাকে ধরতে গিয়ে তিনি নিজেও পড়ে যান শুধু নয় প্যান্টের মধ্যেই কম্ম সেরে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছিলেন ।
না না ধুস । এসব কেউ কুটুম বাড়িতে গল্প করে ? ছি ছি । প্রেশটিজের ব্যাপার।
বিনয় বাবু , কথা উরিয়ে দিয়ে বললেন ,,
না না ,, কিছু নয়। ওই একটু লেগে গিয়েছিল আরকি।
বিষয় কে আরও হালকা করবার জন্যে বললেন , আরে বাবা বুড়ো হাড়ে এসব একটু আধটু হয়েই থাকে । বলেই হা হা ক`রে একাই হেসে উঠলেন। সেই কৃত্রিম হাসি তে প্রাণ ছিলোনা ।
কিন্তু মজার কথা হলো , রিলে সিস্টেমের মাধ্যমে নারায়নী থেকে জামাই বাবাজী। জামাই বাবাজী থেকে ইনু। ইনু থেকে শাশুড়ী মা হয়ে শ্বশুর মশাই পর্যন্ত কথাটা রটে গিয়েছে । তবুও কেউ তা প্রকাশ করছেন না , নিতান্তই সৌজন্যের খাতিরে ।
ভদ্রসমাজে এটাই রীতি , ভদ্রতা ।
পরদিন দুপুরে সর্ষে ইলিশ দিয়ে ভাত খেতে খেতে পরম তৃপ্তির সাথে বিনয় বাবু বললেন বাহ চমৎকার। এখানে এমন ভালো ইলিশ পাওয়া যায় জানতাম না তো। দারুণ।
বেনারসী শ্বশুর একগাদা হেসে মাছের কাঁটা ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন ,,,
শুধু মাছের প্রশংসা করলে হবেনা মশাই । রাঁধুনির প্রশংসাও চাই ।
বেনারসী শ্বাশুড়ি তৎক্ষনাৎ কথাটা লুফে নিয়ে বললেন,,,
অবশ্যই । সকাল থেকে খেটেখুটে রান্না করলুম ,, তার একটা মূল্য নেই ?
নারায়নী সেই কথায় সায় দিয়ে বললেন,,,
ঠিকই তো। ইলিশ হোক বা যা-ই হোক , কাঁচা খেয়ে তো তারিফ করা চলেনা। তারিফ রান্নার। কী,, ঠিক কি-না ?
বেনারসী শ্বশুর বাঁহাত দিয়ে ডাইনিং টেবিল চাপড়ে বললেন ,,
ওয়েল সেড ম্যাডাম , ওয়েল সেড। চলুন , আজ সন্ধ্যারতি দেখতে যাবো সব্বাই মিলে। অবিশ্যি যদি মিষ্টারের শরীর ভালো থাকে ।
নারায়নী , কাউকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে বললেন ,,,
একদম । চলুন , সব্বাই যাবো।
বেনারসী শ্বাশুড়ি বললেন ,,,
না না,, ইনু বাচ্চাকে নিয়ে একা থাকবে কেমন করে। আমি যাবো না। তোমরা যাও। আমি তো বলতে গেলে প্রায় রোজই দেখি। ওনাদের ঘুরিয়ে নিয়ে এসো। খুব ভালো লাগবে।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে , বিনয় বাবু কাউকে কিছু না জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে পরলেন। এদিকে ওনাকে দেখতে না পেয়ে , নারায়নী একটু চিন্তিত হয়ে মেয়ে কে বললেন ,,,
হ্যাঁ রে ইনু , তোর বাবা কোথায় গেল বলতো! তোকে কিছু ব’লে গিয়েছে?
ইনু অবাক হয়ে বললো,,,
কই,, না তো ! এই দুপুরবেলা,, কোথায় গেল?
নারায়নী মাথা ঝাঁকিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে বললেন ,,
ভালো লাগেনা বাবা। যত্তো ঝামেলা,, ওফ্ফ।
ইনু হঠাৎ বললো , ও হ্যাঁ , মনে পরেছে। বাবা বলছিলো বটে , দুপুরে খাওয়ার পরে সকলকে চমকে দেবো।
নারায়নীর চোখ গোলগোল হয়ে উঠলো ।
বলিস কীরে? চমক! এ আবার কেমন কথা ! চমকে দেবার কী আছে , সারা জীবন ধরেই তো চমক আর ধমক দিচ্ছে । দ্যাখ কী খেল দেখায়। আর ভাল লাগেনা বাপু।
নারায়নীর কথা শেষ হতেনা হতেই , হাতে সবুজ পাতায় মোড়া বড়ো আকারের একটা ঠোঙ্গায় গুচ্ছের খানেক বেনারসী পান নিয়ে হাসতে হাসতে বিনয় বাবু এলেন।
নারায়নীর মেজাজ বিগড়ে ছিল। তারমধ্যে ওনাকে হাতে পানের খিলির ঠোঙ্গা নিয়ে হাসতে দেখে মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেল। চিৎকার ক`রে বললেন,,
কী ব্যাপার কী তোমার ,কাউকে কিছু বলা নেই , হুট ক`রে বাইরে চলে গেলে? অচেনা জায়গা,,, বুদ্ধিশুদ্ধি কবে হবে শুনি,,।
বিনয় বাবু সেসব কথায় কান না দিয়ে হঠাৎ নাচতে শুরু করে দিলেন , সঙ্গে গান,,,
খাইকে পান বনাও রসওয়ালা
খুল যায় বন্ধ আকল কা তালা।
সেই নাচ গানের দাপটে সব্বাই সেখানে এসে হাজির। কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দেখার পরে , বেনারসী বেয়ান, বেয়াইও নাচতে শুরু করে দিলেন। সঙ্গে তারস্বরে ডন ছবির গান। তাতে মিশলো অমিতাভ বচ্চনের নাচের স্টাইল।
খাইকে পান বনাও রসওয়ালা,,,,
নাচগান যেমন হঠাৎ শুধু হয়েছিল , তেমনই হঠাৎ করে শেষ হলো ।
নারায়নীর ঠোঁটের আগায় মৃদু হাসির ঝিলিক বুঝিয়ে দিলো তিনিও খুব মজা উপভোগ করেছেন।
বিনয় বাবু, সকলের হাতে ম ম করা গন্ধ ছড়ানো বেনারসী পান বিলোতে বিলোতে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন ,,
যৌবনের বৃন্দাবন , বার্ধক্যের বারাণসী।
জয় হোক জয় হোক বাবা বিশ্বনাথের।
জয় হোক আমার নাতনির।
নাতনির নরম মাথায় , পরম স্নেহের হাত রেখে আপ্লূত গলায় বললেন,,,,
ওরে মা আমার , আবারও কতদিন পরে,
মনে এতো সুখ , এতো আনন্দের অনুভূতি পেলাম।
সে যে শুধু তোর জন্যে রে মা আমার ,, শুধু তোর জন্যে ।
শেষের কথা গুলোর মধ্যে কেমন যেন মন পাগল করা আবেগ লুকিয়ে ছিল , তাই
বিনয় বাবুর গলা সামান্য কেঁপে উঠল । সেই আবেগের দোলা ছড়িয়ে পড়লো সবখানে।
সকলেরই চোখের কোল চিকচিক করছিল , আনন্দে ।।